প্রকাশিত: Sat, Mar 2, 2024 11:52 AM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 3:19 PM

[১]বেইলি রোডে আগুন লাগা ভবনটিতে ফায়ার এক্সিট ছিলো না, সব ফ্লোর ও সিঁড়িতে ছিলো গ্যাস সিলিন্ডার [২]নিহত ৪৬

মাসুদ আলম: [৩] রাজধানীর বেইলি রোডে ‘গ্রিন কোজি কটেজ’  ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সামনে আসছে নানা মর্মস্পর্শী ঘটনা। অগ্নিকাণ্ডে আহতদের ২ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ১০ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।

[৪] প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভবনটির রেস্তোরাঁগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকতো। বৃহস্পতিবারও কেউ রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন পরিবারসহ, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। আবার কেউ গিয়ে ছিলেন খাবার   আনতে, কেউ কেউ ভবনটিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে কালো ধোঁয়ায়। 

[৫] পুরো ৭ তলা ভবনটি পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবনটির নিচ তলায় চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। অনেকগুলো গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে ভবনে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যায়। মাত্র এক মাস আগে ভবনটির নিচ তলায় এই দোকানটি যাত্রা শুরু করে। 

[৬] ভবনটিতে ২টি লিফট ও একটি সরু সিঁড়ি ছিল। তবে জরুরি ফায়ার এক্সিট ছিল না। অগ্নিনিরাপত্তা ও লোকজন বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ভবনটিতে প্রবেশ করার রাস্তা ছিল মাত্র একটি। সেটি নিচ তলার চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে। 

[৭] কাচ্চি ভাইতে ডিসকাউন্ট থাকায় সেখানে অসম্ভব ভিড় ছিলো।  ভবনটির বিভিন্ন রেস্তোরায় খেতে যাওয়া মানুষদের মধ্যে কয়েকজন লাফিয়ে ও তার বেয়ে নিচে নামেন। বাকি কয়েকজন জীবন বাঁচাতে ছাদে যান। 

[৮] অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জানা গেছে, রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সাভির্সের কর্মীরা রাত ১১টা ৫০ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসেন। ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে অগ্নিকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডি।  

[৯] তিনতলা বাদে পুরো ভবনটিতে ছিলো রেস্তোঁরা। ভবনের নিচতলায় স্যামসাং ও গেজেট অ্যান্ড গিয়ার নামে দুটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান এবং  চায়ের চুমুক নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই নামের একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ইলিয়ন নামের একটি পোশাকের ব্র্যান্ডের দোকান, চতুর্থ তলায় খানাস ও ফুকো নামের দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চম তলায় পিৎজা ইন নামের একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠ তলায় জেসটি ও স্ট্রিট ওভেন নামের দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদের একাংশে অ্যামব্রোশিয়া নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল। রেস্টুরেন্টের জন্য ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না এই ভবনের।

[১০] শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, বেইলি রোড এখন জনশূন্য। কিছু মার্কেট খুললেও বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ মার্কেট। আর পুড়ে যাওয়া ভবনের পাশের কেএফসি-পিৎজা হাটে ক্রেতাশূন্য।

[১১]  জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৪০ জনের মরদেহ, তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢামেক মর্গে রয়েছে ৫ জনের মরদেহ এবং একজনের মরদেহ বার্ন ইনিস্টিটিউটে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জনের নামপরিচয় শনাক্ত করতে দেওয়া হয়েছে ডিএনএ টেস্ট। 

[১২] ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

[১৩] ভবনে উদ্ধারকাজে যুক্ত ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী বলেন, ভবনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সিঁড়িতে বড় বড় গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেগুলোতে আগুন ধরে যাওয়ায় লোকজন বের হতে পারেননি। ৭৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

[১৪] কাচ্চি ভাইয়ের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নিচ তলায় আগুন দেখতেই পাই। পরে দ্রুত গেস্টদের নিচে নামতে বলি। আমি দৌড়ে আগুনের ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে নিচে নেমে আসি। তখন ৩০ থেকে ৪০ জন গেস্ট ছিলো। 

[১৫] ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, ভবনটির দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয় কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট থেকে। রেস্টুরেন্টে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না। ঘটনার সময় সেখানে মানুষের উপস্থিতও ছিল বেশি। ভেন্টিলেশন না থাকায় ধোঁয়া বের হতে পারেনি। ফলে দম বন্ধ হয়ে তারা মারা যান। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব